আপডেট: ২০২৪-০৯-০৬
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সরকার ‘সুস্পষ্ট গণহত্যা’ চালিয়েছিল মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে দেশে ‘হিংসার ও প্রতিশোধের রাজনীতির’ অবসান চেয়ে জামায়াতের আমির বলেছিলেন, দল হিসেবে আমাদের প্রতি যা করা হয়েছে, আমরা আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিলাম।
এদিন মজলিসে শুরার সভায় ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বিগত আন্দোলন ও হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এ গণহত্যা ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই। দল হিসেবে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের সঙ্গে যে বৈরিতা করা হয়েছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অফিসগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে, আমাদের স্বস্তির সঙ্গে চলতে দেওয়া হয়নি, দফায় দফায় আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে বিভিন্নভাবে। শেষ পর্যন্ত দিশাহারা সরকার শেষ মুহূর্তে আমাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের কলিজা ঠান্ডা করেছে। তবে আমরা বলেছি প্রতিশোধ নেব না’।
এ কথার ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘প্রতিশোধ না নেওয়ার মানে হচ্ছে- আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যিনি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলাও হবে এবং তাকে সে মামলায় শাস্তিও পেতে হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমনের চেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো মূল্যে গদি টিকিয়ে রাখতে হবে, এই জেদ ধরে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়। এটা ছিল সুস্পষ্ট গণহত্যা। শুধু স্থলভাগে নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালানো হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আশুলিয়ায় ভ্যানভর্তি মানুষের মরদেহের ভিডিওর কথা তুলে ধরেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘সেখানে ট্রাকের (ভ্যান) ওপর লাশের স্তূপ। তারপর ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। আমরা কোন সভ্যতায় বসবাস করছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব, এ গণহত্যা যারা সংঘটিত করেছে, অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে’।
এ সময় ধনী-ব্যবসায়ী লুটেরাদের বিচার ও তাদের ক্ষমা না করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, গরিব দেশের কিছু চতুর ধনী ব্যক্তি জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছে। এ অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এদের আইনের আওতায় এনে অর্থও ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।
এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে ‘মিথ্যা তথ্য ও সাজানো আদালতের রায়ে’ ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের আমির। এ সময় ওই পাঁচ নেতাসহ ১১ জন প্রয়াত নেতাকে স্মরণ করেন তিনি।
দীর্ঘ বক্তব্যে শফিকুর রহমান বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন, কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, গ্রেফতার, মামলা-হামলার ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শুধু জামায়াত নয়, বিরোধী দল বিএনপি, হাজারো ওলামায়ে কেরামের ওপর একই ধরনের তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। যদিও জামায়াতের ওপর তাণ্ডব ছিল ভিন্নমাত্রার, ভিন্ন গভীরতার।
শত শত ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে দিতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এদিন সাড়ে ১৩ বছর পর দলের সারা দেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্যদের সরাসরি উপস্থিতিতে এ অধিবেশন হয় বলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
© Copyright https://ctgbulletin.net/
Developed By Muktodhara Technology Limited.