আপডেট: ২০২৪-০৮-২৩
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করতে গিয়ে দুজন আহত হয়েছেন।
প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশরী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান। তিনি জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ওই স্থানের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
পাউবো কর্মকর্তারা বলেছেন, গত দুই দিনে পানি বাড়ার হিসাব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। গতকাল বিকেলে পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে। ১৯৯৭ সালে নদীটিতে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল।
পানির তোড়ে ভাঙনের খবরে বাঁধের আশেপাশের শতাধিক পরিবার নিজেদের ঘর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল আটটায় সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়বুড়িয়া গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা বাড়িঘর হারিয়ে দিশাহারা অবস্থায় আছে।
বুড়বুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী গোলাম কিবরিয়া জানান, তাঁর বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব বলতে গিয়ে একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বুড়বুড়িয়া গ্রামের অন্তত ২০ জন বাসিন্দা জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় নদীর পানিতে হঠাৎ ঘূর্ণন শুরু হয়। তারপরই বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। প্রথমে বাঁধটি ১০ ফুটের মতো ভাঙে। তারপর ২০ ফুট করে বড় আকারে ভেঙে যায়।
বন্যা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন নানুয়ার বাজার গ্রামের গৃহবধূ আইরিন আক্তার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সপরিবার তাঁদের ঘর ছাড়তে হয়েছে। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘১২ বছরের সংসারটা সাজানো–গোছানো ছিলো। পানি সব নিয়ে গেল।’
বন্যার আশঙ্কায় গতকাল রাতে কোলের বাচ্চাকে নিয়ে সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন একই এলাকার বাসিন্দা সোমা রানী। পানিতে তাঁদের বাড়িঘরও ডুবে গেছে। এখন কোথায় থাকবেন, সেই ভাবনাতেই দিশাহারা। এসব আশঙ্কার কথা জানাতে গিয়ে তাঁর চোখও ভিজে ওঠে। একপর্যায়ে আঁচলে চোখ মুছেন তিনি।
গোমতীর বাঁধের ভান্তি, কামারখাড়া ও বালিখাড়া অংশে পাঁচ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। শিশুদের মধ্যেও স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস নেই। তাদের চোখ–মুখেও আতঙ্কের ছাপ পড়েছে। বন্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর মধ্যে খুব বেশি খাবারের জোগান নেই। দ্রুত শুকনো খাবার ও পানির প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বন্যা আক্রান্তরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
© Copyright https://ctgbulletin.net/
Developed By Muktodhara Technology Limited.