লীজের টাকা কর্মচারীদের পকেটে
আপডেট: ২০২৪-০৬-২৬
নিয়মানুযায়ী কুতুবদিয়া আবহাওয়ার কার্যালয়ে নানা তথ্য থাকার কথা। কিন্তু কুতুবদিয়ার এ কার্যালয়টি কোনো দিনই সচল ছিল না। নিজেদের মুঠোফোনে কার্যালয়ের তিন ঘন্টার ব্যবধানে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একটি আবহাওয়ার বার্তা দিয়ে দায়িত্ব পালন করে চলছে। এ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটিতে দু'জন পর্যবেক্ষক থাকলেও তাঁদের কার্যালয়ে দেখা যায় না। দিনের পর দিন তালাবদ্ধ এ কার্যালয়ের জনবল এবং কার্যক্রম সবই অদৃশ্যমান। বান্দরবান ও জয়দেবপুর কার্যালয়ের ২ জন পর্যবেক্ষক দিয়ে প্রায় এক যুগ হলেও এখন পর্যন্ত ৭টি পদেই শূন্য রয়েছে। অস্থায়ী ওই দুই পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি ১টি পুকুরসহ ১ দশমিক ৫ একর সংরক্ষিত জমি গোপনে লীজ দিয়ে সেই লীজের টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রটি অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘ একযুগেও একই কার্যালয়ে থাকার সুবাদে দু'জন কর্মচারীই কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত। তাদের মুঠোফোনে কার্যালয়ের তিন ঘন্টার ব্যবধানে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একটি আবহাওয়ার বার্তা দিয়ে কোন রকম দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কার্যালয়ে ৭টি পদের মধ্যে ৭টি পদেই শূন্য রয়েছে। বান্দরবান কার্যালয়ের পর্যবেক্ষক শাহজাহান কবীর ও জয়দেবপুর কার্যালয়ের পর্যবেক্ষক হুমায়ুন কবির প্রায় এক যুগ ধরে ওই দুই কার্যালয়ের বিপরীতে তারা কুতুবদিয়া কার্যালয়ে রয়েছেন। দীর্ঘকাল যাবত একই কার্যালয়ে থাকার সুবাদে পুকুরসহ ১ দশমিক ৫ একর সংরক্ষিত জমি স্থানীয় মো. হোছাইন ও মো. আলমগীর নামের দুই ব্যক্তির কাছে কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বাৎসরিক লীজ দেন ওই দুই কর্মচারী। বিগত প্রায় এক দশক ধরে স্থানীয় লোকদের কাছে লীজ দিয়ে আসছেন। তবে, এই লীজের বিষয়টি তারা কোনো কাগজপত্র ছাড়া শুধু মাত্র মৌখিক ভাবে দেন। তাই লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না করে নিজেরাই আত্মসাৎ করেন। ওই কার্যালয়ের সংরক্ষিত এলাকার জমি প্রতি বছরের মতো এ বছরও মো. হোছাইন ও মো. আলমগীরকে লীজ দিয়েছেন। হুমায়ুন কবিরের অনুপস্থিতিতে লীজের বিষয়টি পর্যবেক্ষক শাহজাহান কবীর অস্বীকার করলে ওই সংরক্ষিত জমিতে ক্ষেতের নিয়োজিত শ্রমিকেরাই হোছাইনের মাধ্যমে কাজ করছেন বলে জানান। এ দপ্তরের যে কাঙ্ক্ষিত সেবা দৈনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড়ের (বিশেষ বিজ্ঞপ্তি), ভারী বর্ষণের সতর্কতা, দীর্ঘ মেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাস কোন সেবাই এই কার্যালয় থেকে মিলছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ এখানে আবহাওয়া কার্যালয় থাকলেও দুই কর্মচারী নিয়মিত থাকে না। অফিস ফাঁকি দিয়ে ওই কর্মচারীরা ভাড়া বাসায় কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত। তাদের পরিচিত স্থানীয় দু'জনকে ১.৫ একর কার্যালয়ের সংরক্ষিত এলাকার জমি চুক্তি ভিত্তিক লীজ দিয়ে প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
বিষয়টি অস্বীকার করে ওই দপ্তরের পর্যবেক্ষক শাহজাহান কবীর বলেন, আমি সরকারের কোনো জায়গা লীজ দেয়নি। কেউ লীজের কাগজপত্র দেখাতে পারবে না। আর লীজ দেয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নাই। এগুলো মিথ্যা কথা বলেছে। তার এমন বক্তব্যের পেক্ষিতে শাহজাহান কবিরসহ কার্যালয়ের সীমানায় সংরক্ষিত এলাকায় জমির ক্ষেতে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা বলেন, হোছাইনের অধীনে দৈনিক সাড়ে ৫শ টাকায় এ ক্ষেতে নিয়মিত কাজ করছেন তারা। এরপরে, ওই পর্যবেক্ষক স্থানীয় মো. হোছাইন ও মো. আলমগীরের নামে লীজের বিষয়টি স্বীকার করেন।
© Copyright https://ctgbulletin.net/
Developed By Muktodhara Technology Limited.