চট্টগ্রামে মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন হেভিওয়েট তিন নেতা
আপডেট: ২০২৩-১২-১১
চট্টগ্রামে মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন হেভিওয়েট তিন নেতা
চট্টগ্রামের হেভিওয়েট তিন নেতা আপিল শুনানিতে মনোনয়ন ফিরে পাওয়ার খবরে তাদের সমর্থক ও অনুসারীদের মধ্যে খুশির আমেজ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই তিন হেভিওয়েট নেতা হলেন, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের মো. গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরীর একাংশ) আসনের আবদুচ ছালাম এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের এম এ মোতালেব।
জানা গেছে, গতকাল রোববার ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আপিল শুনানির পর তিন জনের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনার আপিল শুনানি করেন। দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের সই ত্রুটিপূর্ণ থাকার অভিযোগে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডেরও একজন। সাত বার সংসদ সদস্য এবং দু’বার মন্ত্রী ছিলেন। ৮২ বছর বয়সী মোশাররফ সরে গিয়ে এবার নির্বাচনের মাঠ তুলে দিয়েছেন ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল। উচ্চশিক্ষিত রুহেল চলচ্চিত্র প্রযোজনা, সিনেপ্লেক্স ও হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত গিয়াস উদ্দিন দলের স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্তের ঘোষণার পর মাঠে নামেন। ফলে আলোচনা তৈরি হয়, মিরসরাইয়ে বাবার উত্তরাধিকার রুহেলের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন গিয়াস। কিন্তু মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়লেও এখন উচ্ছাসিত অনুসারীরা।
জানা গেছে, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আশির দশকের ছাত্রলীগ নেতা। পরবর্তী সময়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেও সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৯ সালে তিনি মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এক সময় মোশাররফ ও গিয়াসের মধ্যে ‘গুরু-শিষ্যের’ সম্পর্ক থাকলেও ২০০৯ সালের পর তাতে ভাঙন ধরে। দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন, মোশাররফ ভবিষ্যতের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গিয়াসকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
শেষপর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে শঙ্কা কেটে যাবার পর গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি প্রথম ধাপে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি চাই, ভোটের মাধ্যমে মানুষ তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুক। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি মিরসরাইয়ের মানুষের ভালোবাসা ও তাদের অনুরোধে। আমি বিশ্বাস করি, আপামর জনসাধারণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।
গিয়াস উদ্দিনের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, আমি আশা করছি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে, জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ যেন বজায় থাকে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এ আসনে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ ব্যবসায়ী আবদুচ ছালাম। কিন্তু জোট রাজনীতির কারণে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় জাসদের মঈন উদ্দিন খান বাদলকে। পর পর তিন দফায় নির্বাচিত হওয়া বাদল ২০১৯ সালে মারা যান। শূন্য আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মারা গেলে নোমান আল মাহমুদ উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচন এবং দুই দফা উপনির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন আবদুচ ছালাম, যিনি ১০ বছর সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থিতা উন্মুক্তের সুযোগে তিনি নির্বাচনের মাঠে আসেন।
মনোনয়ন ফিরে পাওয়ার পর আবদুচ ছালাম বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে সবসময় মানুষের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। আমি সিডিএ চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আল্লাহ আমার মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের কী কী উন্নয়ন করেছেন, সেটা নগরবাসী জানেন। হয়তো আল্লাহ অবহেলিত বোয়ালখালীর উন্নয়নও আমার মাধমে করাবেন। হয়তো কালুরঘাট সেতু আমার হাত দিয়েই হবে। জনগণ আমার সঙ্গে আছেন, ইনশল্লাহ আমি জয়ী হবো।
এছাড়া চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। ‘জামায়াত ঘরানার’ নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ তাকে দলে নিলেও দলটির পোড়খাওয়া অনেক নেতাকর্মীই তাকে মেনে নিতে পারেননি। একাংশের বিরোধিতার মধ্যেই নদভী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় সাংসদ নির্বাচিত হন। গত ১০ বছরে সংসদ সদস্য হিসেবে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘জামায়াত তকমা’ ঘুচিয়ে এলাকায়-দলে প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করতে বিভিন্ন সময়ে তার কর্মকাণ্ড বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ আছে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নিজের স্বজন ও অনুসারীদের তিনি আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যারা ছিলেন, তাদের কোণঠাসা করেছেন। ফলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে পাশে নিয়ে গত দুই নির্বাচনে তিনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নদভীকে ছেড়ে গেছেন। এমন দুই নেতা হলেন- স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান এবং সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব। দুই হেভিওয়েট নেতাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলো বাতিল হয়। এর মধ্যে মোতালেব আপিলে ফিরে পেলেন। মিনহাজের আপিল আবেদনের শুনানি হবে ১৩ ডিসেম্বর। এম এ মোতালেব বলেন, অনেক ষড়যন্ত্রের পরও ন্যায়বিচার পেয়েছি। আজই (রোববার) ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করব।
© Copyright https://ctgbulletin.net/
Developed By Muktodhara Technology Limited.