সংবাদ সম্মেলনে চাকুরিচ্যুত চিকিৎসকের অভিযোগ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে
আপডেট: ২০২৩-১২-০৬
সংবাদ সম্মেলনে চাকুরিচ্যুত চিকিৎসকের অভিযোগ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে
ইমপেরিয়াল হাসপাতালের একাডেমিক কোঅর্ডিনেটর ডা আরিফ উদ্দিন আহমেদকে কোন কারন ছাড়াই, অন্যায় ও অসম্মানজনক আচরনের মাধ্যমে হাসপাতালের গেইটেই চাকুরিচ্যুতির নোটিশ দিয়েছে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কতৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এফ রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে এ অভিযোগ আনেন ওই হাসপাতালের একাডেমিক কোঅর্ডিনেটর ও বিভাগীয় প্রধান (মাস্টার হেলথ চেকআপ) ডা আরিফ উদ্দিন আহমেদ। একই সাথে সন্মেলনে হাসপাতালটির লাইসেন্স নেই বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, ওই দিন সকাল ৯টায় প্রতিদিনের মতই ইমপেরিয়াল হাসপাতালে কর্মক্ষেত্রে গেলে, তাকে হাসপাতালের প্রধান ফটকেই সিকিউরিটি গার্ডবৃন্দ ঢুকতে বাধা দেয় ও তার কাছে ৩ ডিসেম্বরের স্বাক্ষরিত একটি ফটোকপি চিঠি দেয়, যাতে লিখা ছিলো আপনার কাজের শেষ দিবস ছিল গত ৩ ডিসেম্বর। ডা আরিফ উক্ত চিঠির মূল কপি দেয়ার অনুরোধ জানালে তা দেয়া যাবেনা বলা হয়। ইতিপূর্বে গত ৩১ অক্টোবর থেকে ডা আরিফ কে নিয়মিত চাকুরী থেকে চুক্তি ভিত্তিক চাকুরীতে আনার অপততপরতা চালায় ইমপেরিয়াল কর্তৃপক্ষ, তাই ডা আরিফ উক্ত অপততপরতা বন্ধ করার জন্য সিনিয়র সহকারী জজ ২য় আদালত চট্টগ্রামে মামলা (নং-১৫৪/২০২৩) দায়ের করেন। যা এখন বিচারাধীন।
ডাঃ এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের একজন নিয়মিত পূর্ণকালীন স্থায়ী কর্মচারী, বর্তমানে ইন-চার্জ মাস্টার হেলথ চেকআপ এবং একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও মেডিকেল রেকর্ড বিভাগের ইনচার্জ এবং চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অফ নার্সিং এর সমন্বয়কারী হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, ইন্ডিয়া এবং ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, বাংলাদেশ ড়ত বছরের ২৯ মার্চ ব্র্যান্ড লাইসেন্স এবং অপারেশন ও ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস চুক্তি করেছে এবং অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস নাম নিয়ে নতুন নামে হাসপাতাল পরিচালনা করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হসপিটাল লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স এবং হাসপাতাল সম্পর্কিত অন্যান্য সরকারি অনুমোদনে নাম পরিবর্তন করা হয়নি। তাই বর্তমানে হাসপাতালটি কোনো হাসপাতালের লাইসেন্স ছাড়াই "অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল" নামে চলছে। এমনকি অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের নামে কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এছাড়াও নামটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের রেজিস্ট্রারে পাওয়া যায় না। তাই, অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, ভারত এই হাসপাতালটিকে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস হিসাবে চালাচ্ছে কোনও হাসপাতালের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স এবং সরকারী অনুমোদন ছাড়াই।
এই প্রসংগে গত ৩ ডিসেম্বর সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম এর কার্যালয় ইমপেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া হয়। সিভিল সার্জনের চিঠিতে বলা হয়, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড এর কার্যক্রম এ্যাপোলো ইমপেরিয়াল নামে পরিচালিত হচ্ছে। প্রথমত ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা বিধিপরিপন্থি এবং বিভ্রান্তিকর। দ্বিতীয়ত- যেহেতু চিকিৎসা সেবা স্পর্শকাতর বিষয়। বিধিমতে নাম পরিবর্তন ব্যতিরেকে সকল বিলবোর্ড, বিজ্ঞাপন, অফিসিয়াল প্যাড, পত্র যোগাযোগ, সর্বক্ষেত্রে লাইসেন্স অনুযায়ী ইমপেরিয়াল হাসপাতাল নামে পরিচালনা একান্ত অপরিহার্য ও বিধিসম্মত। তৃতীয়ত- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকর্তৃক ইস্যুকৃত ইমপেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড ব্যতীত অন্য কোনো নাম সংযোজন বিয়োজন করে স্থাপিত বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপন, অফিসিয়াল প্যাড, পত্র যোগাযোগ ইত্যাদি অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড আগামী ১০ দিনের মধ্যে অপসারণ ও লাইসেন্স এর সাথে সংগতিবিহীন কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘বর্ণিতাবস্থায়; সেবা গ্রহিতাগণ প্রতারণা ও বিভ্রান্তির সম্মুখীন না হওয়া এবং জনস্বার্থে উপরোক্ত নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। অন্যথায় বিধিমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সকল কর্মকান্ডে, ওয়েব সাইটে, ফেইসবুক পেইজে, ও পত্রিকার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস এর লোগো ব্যবহারের পাশাপাশি ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের নামের স্থলে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস নাম ব্যবহার করছে। যা ইমপেরিয়াল হাসপাতালের দেয়া ব্যখ্যার সাথে সামঞ্জস্ব পূর্ণ নয়। যদিও হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছেন হাসপাতালের নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হয়নি তবুও বাস্তবে সর্ব ক্ষেত্রে পরিবর্তিত নাম “অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস” ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাই যেহেতু অদ্যাবধি অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস নামের কোন হাসপাতালের লাইসেন্স অনুমোদন নেই ও এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাই উক্ত প্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রদত্ত চিঠিটি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য। তাই, এই প্রক্রিয়া তার জন্য অসম্মানজনক, অবৈধ এবং অসৎ উদ্দেশ্যমূলক কাজ হিসেবে প্রতিয়মান হয় এবং তার বিদ্যমান চাকরি থেকে তাকে জোরপূর্বক অপসারনের চেষ্টা বলেই প্রতিয়মান হয়, যা সর্বদিক থেকে অগ্রহণযোগ্য।
© Copyright https://ctgbulletin.net/
Developed By Muktodhara Technology Limited.