আপডেট: ২০২৪-০৮-২৭
অব্যাহত টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় উপকূলীয় ভেড়িবাঁধের জুঁইদন্ডী, রায়পুর ও পারকি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন উপকূলীয় বাসিন্দারা। ভেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে টেকসই ভেরিবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় বাঁধে ভাঙ্গন দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সদ্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আনোয়ারার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ৫৭৭ কোটি টাকার ভেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়। যা ২০১৭ সাল থেকে একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে আনোয়ারার উপকূলীয় অঞ্চল রায়পুর, জুইদন্ডিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের পোল্ডার "এ" এর অধীনে ৪৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। পারকী সমুদ্র সৈকতের সাপ মারা খাল থেকে শুরু করে পরুয়াপাড়া, মধ্যম গহিরা, রায়পুর, বার আউলিয়া, ঘাটকূল,
ফকিরহাট, সরেঙ্গা হয়ে সাপ মারা খাল হয়ে পারকি বিচ পর্যন্ত, পোল্ডার "বি" এর অধীনে শিকলবাহা হতে চাতরি, কৈখাইন, পারৈকোড়া, হাইলধর, বারখাইন, তৈলারদ্বীপ, বরুমচড়া, জঁইদন্ডি ভরাশংখ মুখ পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। বর্তমানে পোল্ডার "এ" তে মধ্যম গহিরা বাইগ্যার ঘাট এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ, ঘাটকুল এলাকা এবং জুইদন্ডি ইউনিয়নে কিছু অংশ বাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, ১১নং জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে শঙ্খ নদীর ভেড়িবাঁধে ভাঙন তীব্র আঁকার ধারণ করেছে। শঙ্খ নদীর ভেড়িবাঁধের প্রায় ৫০০ ফুট জুড়ে ভাঙ্গনে হয়েছে । এই নিয়ে এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার সকাল থেকে ভেড়িবাঁধে ভাঙন দেখতে পান বলে জানান স্থানীয়রা। পারকি এলাকায় গিয়ে পারকি সমুদ্র সৈকতের লুসাই পার্কের পাশেও ভেড়িবাঁধের ভাঙনরত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এই অংশে ভেড়িবাঁধ ভেঙে স্থানীয়দের মাছের প্রজেক্ট পানিতে তলিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান,
ভেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৫৭৭ কোটি টাকা জনকল্যাণের জন্য সঠিকভাবে ব্যয় হয়েছে কিনা সেটি নিয়ে এখন আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ।
ভেরিবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বাঁধ নির্মাণ কাজ টেকসই হয়নি এটি দিবালোকের মত স্পষ্ট । এর জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না । অব্যাহত বৃষ্টিতে হঠাৎ করে ভেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে আশেপাশের ৪-৫ গ্রামের মানুষ খুব ক্ষতিগ্রস্ত হব। এই মুহুর্তে জিও টিউব ও জিও ব্যাগের মাধ্যমে আপদকালীন ব্যবস্থা যদি না নেওয়া হয় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি হবে"।
এই ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনোয়ারা উপজেলার সদ্য সাবেক এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি বলেন, " ভেরি বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৫৭৭ কোটি টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হয়েছে কিনা সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত । সমগ্র আনোয়ারা উপজেলায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে ভেরি বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছিল। এই অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার এখনই উপযুক্ত সময়"।
এই ব্যাপারে জানার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শহীদ এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায় ।
আনোয়ারা উপজেলার সচেতন মহলের অভিমত,
" ভেড়িবাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে ভেড়ি বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল হোতা এবং তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে জবাবদিহিমুলক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক "।
© Copyright https://ctgbulletin.net/
Developed By Muktodhara Technology Limited.